বুধবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমিরাতের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রিতে ইসরাইলের বিরোধিতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে স্টেলথ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন এই বিবেচনার বিরোধিতার কথা জানিয়েছে ইসরাইল। আমিরাতের কাছে অত্যাধুনিক এই অস্ত্র বিক্রি হোক, চাচ্ছেন না অবৈধ রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন অস্ত্র কারখানার একটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ভয়েস অব আমেরিকা এমন খবর দিয়েছে। গত সপ্তাহে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল ও আমিরাত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় তারা নতুন সম্পর্ক গড়ার ঘোষণা দেয়।

তবে আমিরাতের কাছে অস্ত্রবিরতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সামরিক অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, লকহিড মার্টিনের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে আরব আমিরাত আগ্রহী। ইসরাইলও এ বিমান ব্যবহার করছে। ট্রাম্প বলেন, তারা সম্ভবত এফ-৩৫ বিমান ক্রয় করবে। তাদের কাছে টাকা আছে, তারা কয়েকটি যুদ্ধবিমানের অর্ডার দিতে চাচ্ছে। কী ঘটতে যাচ্ছে বিষয়টি আমরা দেখছি। বিষয়টি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে নিজের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে চাচ্ছে ইসরাইল। মঙ্গলবার দখলদার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে মার্কিন এফ-৩৫ বিমান বিক্রির বিরোধিতা করবে তার দেশ।

তিনি বলেন, আমিরাতের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও তারা এতে আপত্তি জানাবে। এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশের কাছে এফ-৩৫ ও অন্যান্য যে কোনো অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করছে ইসরাইল। তবে এ নিয়ে আলোচনা ও তা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। এতে চুক্তি স্থগিত করতে বিশাল একটি সময় হাতে পাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষমতা সম্পন্ন যুদ্ধবিমানটির সর্বশেষ ক্রেতা ছিল পোল্যান্ড। ইতিমধ্যে ৩২টি বিমান ক্রয় করেছে তারা। তবে ২০২৪ সালের আগে প্রথম চালান হস্তান্তর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ রকম যে কোনো অস্ত্র বিক্রিতে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হয়।

কারখানা সূত্র বলছে, ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও জামাতা জারেড কুশনারের সহায়তায় আমিরাতের কাছে সম্ভাব্য অস্ত্র বিক্রির আয়োজন করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে পেন্টাগন কিংবা হোয়াইট হাউসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আরব আমিরাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্ভাব্য অস্ত্র চুক্তির কথা প্রথম প্রকাশ করে ইসরাইলি দৈনিক ইয়েদিওত আহরোনোথ। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর চেয়ে ইসরাইল আরও বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র পাবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। আরব বিশ্বের একটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলে মনে করেন তারা।

ফিলিস্তিনি আলোচক ডা. সায়েব এরাকাত স্কাই নিউজকে বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যকার চুক্তি আমার পিঠে ঢুকিয়ে দেয়া একটি আরবের ছোরা, একটি বিষাক্ত ছোরা। তারা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ ধ্বংস করে দিয়েছে। ইরানের প্রভাব রুখতে আমিরাতসহ অনেক উপসাগরীয় দেশ ইসরাইলকে একটি সম্পদ হিসেবে দেখছে। মঙ্গলবার এক ইসরাইলি মন্ত্রী এমন দাবিই করেছেন। সৌদি আরব, আমিরাত ও ইসরাইলের শত্রু দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ইরানকে। তবে আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলির কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নাবিল আবু নাবিল আবু রুডেইনেহ এক বিবৃতিতে বলেন, এই চুক্তি জেরুজালেম, আল আকসা ও ফিলিস্তিনিদের লড়াইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আর এই সম্পর্ক স্থাপন দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার অস্বীকার করতে ইসরাইলকে সাহস জোগাবে বলে মনে করে প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তারা জানায়, এতে ইহুদিবাদী বিশ্বাসকে এগিয়ে নেবে, ফিলিস্তিনিদের কোনো উপকারে আসবে না।

এই বিভাগের আরো খবর